Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমরার আবার শ্রমিক দিবস কিতার’

admin

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৩ | ০৪:৪৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ মে ২০২৩ | ০৪:৪৭ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
‘আমরার আবার শ্রমিক দিবস কিতার’

Manual1 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
‘কিতা (কী) করতাম (করব) ভাই। পেটোর (পেটের) জ্বালা বড় জ্বালা। পেট না থাকলে তো আর জ্বালা থাকলো না অনে (থাকত না)। আমরার (আমাদের) আবার শ্রমিক দিবস কিতার (কীসের)। পেটের জ্বালায় শ্রমিক দিবসেও আমরা বিশ্রামহীন।’

Manual5 Ad Code

সিলেট সদর উপজেলার ধোপাঘুল এলাকার বিভিন্ন স্টোন ক্রাশার মিলে শ্রমিকদের কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। মাথার ওপরে তেজস্ক্রিয় ভাব নিয়ে বিকিরণ ছড়াচ্ছে সূর্য। এর মধ্যেই বড় একটি হাতুড়ি নিয়ে টুং টাং শব্দে বিশাল পাথরে আঘাতের পর আঘাত করে যাচ্ছেন সিলেটের এয়ারপোর্টের বাইশটিলার বাসিন্দা মোহাম্মদ সুমন মিয়া।

সিলেটের ধোপাঘুল সংলগ্ন স্টোন ক্রাশার মিলগুলোতে পাথর ভাঙার কাজ করে থাকেন তিনি। আজ দিনের মধ্যেই তাকে ভাঙতে হবে দুই ট্রাক পাথর। তাহলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত মজুরি।

Manual1 Ad Code

মোহাম্মদ সুমন মিয়া বলেন, ‘আমি পাত্তর ভাঙ্গার (পাথর ভাঙার) শ্রমিক। বড় পাত্তর ভাঙিয়া মেশিনো ছাড়ি আমি। হারাদিনে দুই-তিনজনে মিলিয়া দুই ট্রাক পাত্তর ভাঙা যায়। ৫৫০ ফুটের এক ট্রাক পাত্তর ভাঙলে ৭০০ টাকা পাই। দুই ট্রাকে ১৪০০ টাকা পাই। তিনজন মিলিয়া (মিলে) হারাদিনে (দিন শেষে) ৪০০-৫০০ টেকা ভাগো (ভাগে) জোটে। এর বাদে (তারপর) বাজার সদাই করিয়া (করে) কোনো মতে দিন যায় আমার। কাজ থাকলে খাইয়া (খেয়ে) পিন্দিয়া (পরে) বাঁচতে পারি। কাজ না থাকলে বউত (অনেক) কষ্ট করিয়া কর্জ করিয়া চলা লাগে।’

তিনি বলেন, ‘আমরার (আমাদের) জন্ম অইসে (হয়েছে) কাজ করার লাগি (জন্য)। কাজ থাকলে আমরা থাকি, কাজ নাই আমরাও নাই। লেবাররা (শ্রমিকরা) সব জাগাত (জায়গায়) কইন মারা খাইন (বঞ্চনার শিকার)। কুনখানও (কোথাও) আমরার দাম নাই। আমরা হকল দিক (সব দিক) দিয়া পিছাইল (পিছিয়ে)। মালসামানার (জিনিসপত্রের) দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। আমরার মাত মাতার (কথা বলার) কুনু মানুষ নাই। লেবাররা এক নায় (শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য নেই)। অভাবে আর পেটে আমরা এক অইতাম পারি না।’

ক্রাশার মিলের শ্রমিক আমির আলী বলেন, মে দিবস আসলে সাংবাদিকসহ সকলের আমাদের কথা মনে হয়। এরপর ভুলে যায় সবাই। জিনিসপত্রের যা দাম আর যা মজুরি পাই তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। কাকে কী বলব। এসব বলে কয়ে কিছু হয় না। আমরা এটা বুঝি আমাদের কাজ থাকলে খাবার আছে, না থাকলে নাই।

এদিকে মে দিবসের ছুটি পেয়ে বিপাকে পড়েছেন সিলেটের তেলিহাটি বাগানের চা-শ্রমিক সুকো দাস ও বাবলু গোয়ালা। বাগানের ডিউটি না থাকায় দুই বন্ধু ভোর ৬টায় বের হয়েছেন লাকড়ি কুড়াতে। ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুজন মিলে লাকড়ি কুড়িয়েছেনও চার আটি। জনপ্রতি ভাগে পেয়েছেন দুই আটি করে। দুজন মিলে চার আটি লাকড়ি নিয়ে সিলেট এয়ারপোর্ট-ধুপাঘোল মহাসড়কে অপেক্ষা করছেন ক্রেতার জন্য। খানিক পরে পেলেনও একজনকে। তিনি একসঙ্গে চার আটি জ্বালানির বাশের লাকড়ি কিনে নিলেন ৪৪০ টাকায়। এতে যেন বেজায় খুশি হলেন সুকো দাস ও বাবলু গোয়ালা।

Manual3 Ad Code

বাবলু গোয়ালা বলেন,সকালেই একসঙ্গে দুজন ঘর থেকে বেরিয়েছি। বাগানের এপাশ ওপাশ কুড়িয়ে বাঁশের লাকড়ি সংগ্রহ করেছি। শেষে এগুলো বিক্রি করেছি ৪৪০ টাকায়। ২২০ টাকা করে জনপ্রতি পেয়েছি। এখন একসঙ্গে নাস্তা করব। বাগানে ডিউটি করলে হাজিরা পাই ১৭০ টাকা। ডিউটি না থাকলে আমাদের ঘর চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তখন বিকল্প কাজ করতে হয় বা খুঁজতে হয়।

সুকো দাস বলেন, আমরা শ্রমিক দিবস দিয়ে কি করব? আমাদের কথা কি কেউ শুনে? অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে গত বছর আমাদের মজুরি বাড়িয়েছি। আমরা কাজ করে খেয়ে পরে বাঁচলেই হয়। আমাদের ছুটি মানেই বিপদ। আমাদের পেটের জ্বালা আছে। আমাদের কোনো বিশ্রামের দরকার নেই। আমরা ছুটির দিনেও বিশ্রামহীন।

 

Manual1 Ad Code

শেয়ার করুন