Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিসিক নির্বাচন : নৌকায় দৃঢ় হচ্ছে ঐক্য, জাপায় দ্বন্দ্ব, আরিফকে নিয়ে ধোঁয়াশা

admin

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৮ মে ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সিসিক নির্বাচন : নৌকায় দৃঢ় হচ্ছে ঐক্য, জাপায় দ্বন্দ্ব, আরিফকে নিয়ে ধোঁয়াশা

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে শক্তিশালী হচ্ছে দলীয় ঐক্য। সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পুনরাবৃত্তি চায় না দলটি। এজন্য সিলেটে এসে কেন্দ্রীয় নেতারা কড়া বার্তা দিয়ে গেছেন দলের নেতা-কর্মীদের।

কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর হুঁশিয়ারি ও মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর তৎপরতায় এক ছাতার নিচে আসতে শুরু করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। মনোনয়নবঞ্চিতরাও দাঁড়িয়েছেন আনোয়ারের পক্ষে।

Manual3 Ad Code

এ ছাড়া মেয়র পদে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হিসাব মেলাচ্ছেন নানা সমীকরণের।

শেষ পর্যন্ত আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী না হলে নৌকাবিরোধী ভোট কোথায় যাবে সে হিসাবই এখন তাদের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আরিফুল হক চৌধুরী এখনো নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেননি। ২০ মে সমাবেশ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা তাঁর।

দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মাঠে নামার পরও অনেকটা অস্বস্তিতে ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা এড়িয়ে চলছিলেন তাঁকে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদবিধারী বেশির ভাগ নেতাও দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলেন। কিন্তু আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নানাভাবে তাদের মান-অভিমান ভাঙাতে সক্ষম হন। একপর্যায়ে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচন নিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে পৃথক সভা করে।

Manual1 Ad Code

যুক্তরাজ্য সফররত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ছাড়া মনোনয়নবঞ্চিত সব নেতাই সভাগুলোয় উপস্থিত থেকে আনোয়ারুজ্জামানকে বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সংশয় ছিল। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা নৌকার পক্ষে কতটুকু সক্রিয় থাকবেন তা নিয়ে দেখা দেয় শঙ্কা।

গেল নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পর কেন্দ্র থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিশ্বাসভঙ্গ ও নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করা হয়েছিল। তাই এবার আনোয়ারুজ্জামানের ক্ষেত্রে যাতে কামরানের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে আগেভাগেই কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর আরামবাগে একটি কনভেনশন হলে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মিসভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ প্রায় এক ডজন কেন্দ্রীয় নেতা।

সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা গতবার বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের জন্য দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ‘খন্দকার মোশতাক অনুসারীদের’ দায়ী করেন। সভায় জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘মোশতাক বাহিনীর কারণেই বিগত দিনে এ নগরের অভিভাবক (সাবেক মেয়র) বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারতে হয়েছে। দলে খন্দকার মোশতাকের অনুসারী যেমন রয়েছে, তেমনি মুজিব আদর্শের লড়াকু এবং ত্যাগী কর্মীরাও রয়েছেন। এবার খন্দকার মোশতাক অনুসারীদের তৎপরতা দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ। দলের প্রতিটি ওয়ার্ডে সভাপতি এবং সম্পাদকের ভোট কেন্দ্রগুলোয় সজাগ দৃষ্টি থাকবে আওয়ামী লীগের। ভোট কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী তারা পুরস্কৃত কিংবা তিরস্কৃত হবেন।’

তিনি সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না যাতে রংপুরের পরিণতি ভোগ করতে হয়।’

এদিকে, গত বৃহস্পতিবারের কর্মিসভা শেষে দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে শুরু করে। দলীয় সূত্র জানায়, যেসব নেতা-কর্মী ভিতরে ভিতরে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন তারা এখন নৌকার বিজয়ের জন্য মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য থেকে তারা নিশ্চিত হয়ে গেছেন, দলীয় প্রার্থী এবার জয়ী হতে না পারলে তাদের সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাই এবার মেয়রের চেয়ার পুনরুদ্ধারে মাঠে নামছেন তারা। নিজের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘দলের সর্বস্তরের শতভাগ নেতা-কর্মী এখন ঐক্যবদ্ধ। কোথাও কোনো অনৈক্য নেই। কেন্দ্রীয় নেতারাও ঢাকা থেকে এসে কর্মিসভায় তাদের স্পষ্ট বার্তা দিয়ে গেছেন। নেতা-কর্মীরা সে আলোকেই কাজ করছেন। এ ছাড়া ভোটাররাও পরিবর্তন চাচ্ছেন। তারা সরকারের দেওয়া বরাদ্দের অপচয় নয়, সদ্ব্যবহার চান। বিগত ১০ বছরের অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের জবাব দিতে তারা উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দিতে উদগ্রীব।’

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জাতীয় পার্টির নেতা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেছেন, দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হলেও কোনো ধরনের সাক্ষাৎকার ছাড়াই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নজরুল ইসলাম বাবুলের নাম ঘোষণা করা হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার ছাড়া দলীয় প্রার্থী ঘোষণা অসাংগঠনিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য তিনি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আরিফের সিদ্ধান্তের জন্য ২০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা :
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। দলীয় এ সিদ্ধান্তের কারণে আরিফের প্রার্থী হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা।

Manual1 Ad Code

তবে আরিফ জানান, দলের সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁর সম্মান আছে। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী হতে নগরীর সাধারণ মানুষের চাপ রয়েছে। তবে দিন দিন নির্বাচনী পরিবেশও নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। প্রার্থিতার বিষয়টি পরিষ্কার করার আগেই সিলেটে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। প্রশাসনে রদবদল চলছে। সব মিলিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ২০ জুন রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করে নির্বাচন নিয়ে তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।

অন্য প্রার্থীদের যে অবস্থা:
বক্তৃতা-বিবৃতিতে অনেক কথা বললেও শেষ পর্যন্ত আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হলে তাঁর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর। দুই চৌধুরীর সেই ভোটযুদ্ধে খুব বেশি পার পাবেন না বাকি প্রার্থীরা। সে হিসাব সব প্রার্থীরই জানা। তবে আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী না হলে নৌকা কিংবা সরকারবিরোধী ভোট কার বাক্সে পড়বে তা নিয়েই হিসাব চলছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা আবদুল্লাহর।

Manual2 Ad Code

আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর অবস্থান স্পষ্ট না করায় এখনো তাঁদের হিসাব ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’তে আটকে আছে।

শেয়ার করুন