Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নজিরবিহীন লুটপাট ও অলীক কল্পনার গণবিরোধী বাজেট : বিএনপি

admin

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩ | ০৮:২০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ | ০৮:২০ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
নজিরবিহীন লুটপাট ও অলীক কল্পনার গণবিরোধী বাজেট : বিএনপি

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নজিরবিহীন লুটপাট ও অলীক কল্পনার অবাস্তবায়নযোগ্য গণবিরোধী বাজেট বলে দাবি করেছে বিএনপি। বুধবার (৭ জুন) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, উপস্থাপন করা বাজেট বর্তমান ফ্যাসিস্ট লুটেরা সরকারের অর্থনৈতিক দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার এক বার্ষিক ঘোষণাপত্র মাত্র। এই বাজেট কল্পনাবিলাসী বাস্তবায়ন অযোগ্য এক উচ্চাভিলাষী বাজেট। এটা স্রেফ দুর্নীতিবাজ বর্তমান সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের লক্ষ্যে প্রণীত অর্থলুটেরাদের বাজেট।

Manual8 Ad Code

তিনি বলেন, বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩.৪ শতাংশ। উন্নয়ন ব্যয় ৩৬.৪ শতাংশ। এই অর্থের সংস্থান হবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আয় থেকে, আর ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ঋণের মাধ্যমে। রাজস্ব আয়ের ৩২.৮ শতাংশ পরোক্ষ কর (ভ্যাট) এবং ৩০.৭ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর। এরই সাথে সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ ও মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ শতাংশ প্রত্যাশা করছে। এ বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত, প্রতারণামূলক, লোক দেখানো বাজেট, জনকল্যাণের জন্য নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দেশের প্রধান জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার না থাকলে জাবাবদিহিতা থাকে না। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধমূলক নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর একমাত্র পথ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান।

তিনি বলেন, সরকার শিক্ষার কথা বলে অথচ দাম বাড়ায় কলমের, ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে দাম বাড়ায় ল্যাপটপ-মোবাইল ফোনের, গরিবের কথা বলে অথচ পরোক্ষ কর আরোপ করে নিত্য প্রয়োজনী জিনিসের ওপর। এটি স্পষ্টতই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। এই বাজেটে সাধারণ ও দরিদ্র জনগণের জন্য কোনো সুখবর নেই, নেই চরম অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের কোনো দিক নির্দেশনা।

Manual8 Ad Code

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে প্রয়োজন ছিল দল-মত ও ব্যক্তির স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সাহসী ও বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন। কিন্তু মোটা দাগে এই বাজেট আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) এর শর্ত বাস্তবায়ন এবং বিগত অর্থবছরের বাজেটের ১৪-১৫ শতাংশ বর্ধিত অবস্থা ছাড়া কিছুই না।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। এই চাপ মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো কার্য্কর পদক্ষেপ নেই বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, খাদ্যসহ তেল, চাল, আদা, চিনি, ডিম, মুরগিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অনেক আগেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে…। অর্থমন্ত্রী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পথরেখা না দিয়েই কীভাবে মূল্যস্ফীতির টার্গেট ৬ শতাংশ ঘোষণা করেছেন তা বোধগম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, বাজেটে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থপাচার প্রতিরোধে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ক্ষমতার বলয়ের বাইরে সাধারণ মানুষের অনুকূলে এ বাজেট কোনো ভূমিকা রাখবে না। এটা গণবিরোধী বাজেট। স্মার্ট বাংলাদেশে এবার তারা স্মার্ট লুটপাটের বাজেট দিয়েছে। তারা চুরিতে স্মার্ট। ভোট চুরি, ব্যাংক চুরি, অর্থ পাচার… এসব কিছুতেই স্মার্টলি লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি করার, ব্যাংক লুটপাট, সিন্ডিকেট পরিচালনা, জনগণের সম্পদ লুটের পাকা বন্দোবস্ত করা হয়েছে এ বাজেটে। এদেশটাকে লুটপাটের অংশীদার বানানো হয়েছে। সেজন্য বলতে চাই, এটা স্রেফ দুর্নীতিবাজ সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার লুটের লক্ষ্যে প্রণীত অর্থ লুটেরাদের বাজেট।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাতে বাজেটে বরাদ্দ কমানোর কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেট ও জিডিপির অনুপাতে এ খাতে বরাদ্দ কমেছে। বরাদ্দ বেশি দেখানোর কৌশল হিসেবে এই খাতে এমন কিছু কর্মসূচি দেখানো হয়েছে যা বাস্তবে সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষা কর্মসূচি নয়। এছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি, সঞ্চয়পত্রের সুদ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রণোদনার টাকাকেও সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ও প্রতিবন্ধীদের মাসিকক ভাতা মাত্র ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকায় প্রতিবন্ধীরা বিক্ষোভ করেছে, পুলিশের পিটুনি খেয়েছে।

বিদ্যুতের টাকা গেল কোথায়
বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু বলেন, আমাদের প্রশ্ন টাকা গেল কৈ? সাধারণ মানুষ তো তাদের বিদ্যুতের বিল দিয়েই যাচ্ছে… এখানে কেউ বাকি নাই এবং উচ্চমূল্যে দিচ্ছে, প্রতিনিয়ত দিচ্ছে। তাহলে কেনো কয়লার জন্য এলসি খুলতে পারছে না, কেনো গ্যাসের এলসি খুলতে পারছে না, কেনো তেলের জন্য এলসি খুলতে পারছে না।

Manual7 Ad Code

তিনি আরও বলেন, আমাদেরও প্রশ্ন এই টাকা কোথায় গেল? টাকাও নাই, ডলারও নাই। এই টাকা কোথায় গেছে আমরা সবাই জানি। বিদেশে সম্পদ কেনা হচ্ছে, সুইস ব্যাংকের টাকা রাখা হচ্ছে, তারপরে অফসর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা হচ্ছে… এগুলো ইতোমধ্যে আমরা জেনেই গেছি। কারা এই টাকার মালিক এটাও দেশের মানুষ কমবেশি জানা হয়ে গেছে।

বিদ্যুতের সংকট সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশিডিংয়ে সবার ত্রাহি অবস্থা। অথচ উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের ফেরি করে বিক্রি করতে হবে পার্লামেন্টে অহমিকা করেছে সরকার। বিদ্যুতের এই সংকটের মূল কারণটাই হচ্ছে দুর্নীতি লুটপাট। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে আদানি পর্যন্ত পুরোটাই লুটপাট। এই খাতকে তারা বেঁছে নিয়েছে যে সর্বোচ্চ দুর্নীতি করা হবে বিদ্যুত খাত থেকে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা সেমিনার করে বলেছিলাম, মাত্র ১০টি কোম্পানি যারা ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের সবচেয়ে বেশি সুবিধা উপভোগ করছে। এরা সবাই সরকারের সঙ্গে জড়িত। বিদ্যুত খাতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে, এ খাতকে পুরোপুরি প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আজকে এই সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে প্রফিট ছাড়া আর কিছু কাজ করছে না।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

Manual1 Ad Code

 

শেয়ার করুন