Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রায়হানের মায়ের অভিযোগ, ২০ লাখ টাকায় আপসের প্রস্তাব দেন কাউন্সিলর কামরান!

admin

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ০৫:৪০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ০৫:৫৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
রায়হানের মায়ের অভিযোগ, ২০ লাখ টাকায় আপসের প্রস্তাব দেন কাউন্সিলর কামরান!

Manual8 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটে চাঞ্চল্যকর রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য্য ছিলো আজ বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর)। বেলা ২টায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ এ. কিউ. এম. নাসির উদ্দীনের আদালতে এক সাক্ষীকে জেরা করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি আদালত প্রাঙ্গনে বলেন- ‘শুরু থেকেই মামলা তুলে নিয়ে আপস করার জন্য আসামিরা নানাভাবে আমাদেরকে চাপ দিচ্ছে ও প্রলোভন দেখাচ্ছে। এমনকি সিসিকের ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমান কামরানের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দিয়েছে আসামিরা। তবে আমরা তাতে রাজি হইনি। স্থানীয় শওকত নামের একজনের মাধ্যমেও ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দিয়েছিলো আসামিরা। সর্বশেষ জেলগেটে আসামিদের সঙ্গে দেখা হলে রায়হানের চাচাকে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দেয় এস. আই আকবর। কিন্তু এসময় আমি বলি- আমার রায়হানকে ফিরিয়ে দাও, আমাদেরকে কোনো টাকা দিতে হবে না।’

তবে এমন ‘অভিযোগ’ সত্য নয় দাবি করেছেন কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমান কামরান। তিনি বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন- ‘রায়হানের মায়ের এমন বক্তব্য সঠিক নয়। শুনেছি শওকত নামের স্থানীয় একজনের মাধ্যমে এ প্রস্তাব দিয়েছিলো আসামিরা, আমার মাধ্যমে নয়।’

Manual6 Ad Code

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে মহানগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। পরদিন (১১ অক্টোবর) সকালে তিনি মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছিল। বর্তমানে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। তিন বছরে ৫৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। মোট সাক্ষী ৬৯ জন।

Manual5 Ad Code

মামলা এ পর্যায়ে বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ এ. কিউ. এম. নাসির উদ্দীনের আদালতে বিবাদী কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) মো. হারুন অর রশিদ পক্ষের আইনজীবী একজন সাক্ষীকে জেরা করেছেন। এই সাক্ষী আগেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। হারুন অর রশিদের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ এই জেরা অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষী একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

মামলার এজাহারে উল্লেখ- ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর (দিবাগত) মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Manual4 Ad Code

২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্যরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)। গত বছরের ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলায় সর্বশেষ সাক্ষ্য দিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩ এর বিচারক শারমিন খানম।

মামলায় অভিযুক্ত এক পুলিশ সদস্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। তবে অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল নোমান এখনো পলাতক। বাকি চার আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মালামাল ক্রোকের আদেশ তামিল করেছে পুলিশ।

Manual7 Ad Code

রায়হান হত্যা মামলার বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন সাক্ষ্য গ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাক্ষী ৬৯ থাকলেও মারা যাওয়া ও বিভিন্ন কারণে কয়েকজন কমে গেছেন। সাক্ষী যারা বাকি রয়েছেন তারা ডাক্তার, পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট। আশা করছি তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং বিচারপ্রক্রিয়া শেষে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।

শেয়ার করুন