বিয়ের খুতবা কখন, কীভাবে পড়তে হয়?
০৪ জানু ২০২৪, ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ
ধর্ম ডেস্ক:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নাত বিয়ে। তিনি বিয়েকে সুন্নাত ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত। অতএব যে আমার সুন্নত পালন থেকে বিরত থাকবে, সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (ইবনে মাজাহ)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَ اَنۡکِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡکُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِکُمۡ وَ اِمَآئِکُمۡ ؕ اِنۡ یَّکُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِهِمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ وَ لۡیَسۡتَعۡفِفِ الَّذِیۡنَ لَا یَجِدُوۡنَ نِکَاحًا حَتّٰی یُغۡنِیَهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ؕ
‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়েতে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে— যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন। (সূরা নুর, (২৪), আয়াত, ৩২-৩৩)
বিবাহিত জীবনব্যবস্থা যে শুধু কামনা-বাসনা দমন করে তা নয়, জাতীয় সত্তার পবিত্রতা অক্ষুণ্ন রাখার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় গুণাবলিকেও দুর্বার গতিতে উজ্জীবিত ও উদ্দীপ্ত করে তোলে। বৈবাহিক যোগসূত্র ছাড়া নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলাম কখনই অনুমতি দেয় না।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের বিয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে নেয়, কেননা তা চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান রক্ষা করে। (বুখারি, হাদিস, ৫০৬৬; মুসলিম, হাদিস, ১৪০০)
বিয়ের খুতবা কখন, কীভাবে পড়তে হয়?
বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ বিয়ের খুতবা। সাক্ষীর উপস্থিতিতে ইজাব-কবুলের আগে বিয়ের খুতবা পড়া সুন্নত। তবে খুতবা পড়া ফরজ কিছু নয়। এজন্য শরীয়ত নির্ধারিত সাক্ষীর উপস্থিতিতে যদি বিশুদ্ধভাবে বিয়ের ইজাব-কবুল হয়ে যায় এবং উপস্থিত সাক্ষীরা ইজাব-কবুলের শব্দগুলো শুনে তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে।
ইজাব-কবুলের আগে খুতবার শব্দগুলো পড়া না হলেও এতে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়বে না। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ, ৬১২২৫৩ ফতোয়া, ১২৬২-৯৫৩)
এই খুতবা দাঁড়িয়ে দেওয়া সুন্নত। তবে বসে দিলেও কোনো গুনাহ নেই। তাতে বিবাহের কোনো ক্ষতি হবে না। (জামেউল ফাতাওয়া,ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ) তবে অবশ্যই খুতবা আরবীতে দিতে হয়। নিচে বিয়ের আরবি খুতবা, উচ্চারণ ও অর্থসহ তুলে ধরা হলো-
বিয়ের খুতবা
আরবি :
إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه، ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا، من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له، واشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له، واشهد ان سيدنا ومولانا محمد عبده و رسوله، الذي أُرسل الى الناس كافةً بشيرا ونذيرا، وداعيا الى الله بإذنه سراجا وقمرا منيرا، اما بعد
فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم، يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ (سورة آل عمران : 102)
وقال تعالى: يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ، واحِدَةٍ، وخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا ونِسَاءً واتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ والْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (سورة النساء:1)
وقال تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا (سورة الأحزاب: 70-71)
وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله في النصف الباقي (صحيح الترغيب والترهيب للامام الالباني رحمه الله)
وقال عليه الصلاة والسلام: النِّكَاحُ من سُنَّتِي فمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَليسَ مِنِّي ، و ايضا قال: تَزَوَّجُوا الوَدُودَ الوَلودَ ، فإني مُكَاثِرٌ بكم الأنبياءَ يومَ القيامةِ (أخرجه أحمد: 13594)
বাংলা উচ্চারণ :
ইন্নাল হামদা লিল্লাহি, নাহমাদুহু ওয়া নাস্তাইনুহু, ওয়া নাস্তাগফিরুহু, ওয়া নাঊযুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা, ওয়ামিন সায়্যিআ-তি আ’মালিনা, মাই ইয়াহদিহিল্লাহু, ফালা মুদ্বিল্লালাহ, ওয়া মাই উদলিল ফালা হাদিয়া লাহ।
ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ, আল্লাযি উরসিলা ইলান্না-সি কা-ফ্ফাতাম, বাশীরাও ওয়া নাযিরা।
ওয়া দা-ইয়ান ইলাল্লা-হী বিইযনিহী ওয়া সিরাজাও, ওয়া ক্বামারাম মুনীরা। আম্মা বা’দ!
ফাআঊযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজিম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। “ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুত-তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন।”
ওয়া-ক্বালা তায়ালা: “ইয়া আইয়্যুহান্নাসুত-তাকু রাব্বাকুমুল লাযি খালাকাকুম মিন নাফসিও ওয়াহিদাতিও, ওয়া-খালাকা মিনহা যাওজাহা, ওয়া-বাচচা মিনহুমা রিজালান কাসিরাও ওয়া নিসা, ওয়াত-তাকুল্লাহাল্লাযি তাসা আলুনা বিহি, ওয়াল আরহাম, ইন্নাল্লাহা কা-না আলাইকুম রাকিবা।”
ওয়া-ক্বালা তায়ালা: “ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুত তাকুল্লাহা, ওয়া কূ-লূ কাওলান চাদিদা। ইউসলিহ লাকুম আ-মালাকুম ওয়াগ ফির-লাকুম যুনুবাকুম, ওয়ামাই য়ূতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলাহু ফাকাদ ফাযা ফাওযান আযিমা।”
ওয়া-ক্বালা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: “ইযা তাযাওয়াযাল আবদু, ফাকাদ ইসতাকমালা নিসফাদ দ্বীন‚ ফাল-ইয়াত্তাক্বিল্লাহা ফীন নিসফিল বাক্বী।” (শুয়াবুল ঈমান)
ওয়া-ক্বালা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: “আন্নিকাহু মিন সুন্নাতী, ফামান রাগিবা আন সুন্নাতি ফালাইসা মিন্নী।” ওয়া-ক্বালা আইজান: “তাজাওয়্যাজুল ওয়ালু-দাল ওয়াদু-দা, ফা-ইন্নি মুকাচিরুম বিকুমুল আম্বিয়া, ইয়াউমাল কিয়ামাহ।”
বাংলা অনুবাদ :
নিশ্চয়ই প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তার প্রশংসা করছি। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ থেকে এবং আমাদের খারাপ কর্মগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত করেন তাকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারেনা, আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ হেদায়াত দিতে পারেনা এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে সত্যিকারে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না।
হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার জোড়াকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভয় করো যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট জিজ্ঞাসা করো এবং সতর্ক থাকো রক্ত আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তিক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা, আয়াত, ১)
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের কর্মক্ষেত্র ত্রুটি মুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করে। (সূরা আহযাব, আয়াত, ৭০-৭১)
আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন বিবাহ করে তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে নেয়। অতএব তাকে তার অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত।